পদব্রজে পান্ধারপুরে তীর্থ করতে চলেছেন এক পিতা, সঙ্গে তাঁর সাত-বছরের ছোট্ট মেয়ে। বাৎসরিক এই তীর্থযাত্রার নাম আষাঢ়ি ওয়ারি — মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ওয়ারকারি বিট্ঠল দেবের দর্শনে জড়ো হন এই মন্দিরে। চলতে চলতে লাতুর জেলার মহিসগাঁওয়ে শিবির পাতার সিদ্ধান্ত নেন তীর্থযাত্রীরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয় কীর্তনের ভক্তিরসে। পুঁচকে মেয়েটির কানে আসে, কাছেপিঠে কোথাও একটা রিনিঝিনি সুরে খঞ্জিরি (খঞ্জনী) বাজছে, ব্যাস, সে বাবার কাছে জেদ ধরে বসে, গান শুনতে তাকে নিয়ে যেতেই হবে!

বাবা কিন্তু মোটেই রাজি হন না। “এখানকার লোকে আমাদের মতো মাহার আর মাঙদের ছুঁতেই চায় না,” আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন মানুষটি, “ওদের চোখে আমরা নেহাতই ফালতু। আসরে ঢুকতেই দেবে না।” কিন্তু মেয়েটি মানতে নারাজ, গোঁ ধরে বসে আছে। শেষমেশ তার বাবা এই শর্তে রাজি হন যে তাঁরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে শুনবেন। খঞ্জনীর শব্দ ধাওয়া করে পিতা-কন্যা পৌঁছে যান প্যান্ডেলে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকেন, কীর্তন গাইতে গাইতে খঞ্জিরি বাজাচ্ছেন এক মহারাজ। খানিক বাদেই মঞ্চে ওঠার ইচ্ছেটা পোকার মতো নড়ে ওঠে মেয়েটির মাথায়। ছটফট করতে করতে হঠাৎই সে দৌড় লাগায়, একছুটে উঠে যায় মঞ্চে!

স্টেজে পা রেখেই সংগীত পরিবেশক সন্তকে সে বলে, “আমি একখান ভারুড [এক প্রকারের প্রাচীন কবিতা, যা রঙ্গব্যঙ্গাত্মক গানের মাধ্যমে সামাজিক বোধোদয়ের কথা বলে] গাইতে চাই।” দর্শক তো একেবারে হতভম্ব। মহারাজ কিন্তু তাকে গাইতে দিয়েছিলেন। তারপর, মিনিট কয়েক মঞ্চ দখল করে, ধাতব কলসিতে তাল ধরে ওই মহারাজেরই লেখা ও সুরারোপিত একখান গান গায় মেয়েটি।

माझा रहाट गं साजनी
गावू चौघी जनी
माझ्या रहाटाचा कणा
मला चौघी जनी सुना

কুয়োর ’পরে কাঠের চাকা, শোন্ রে প্রিয়জন,
একসঙ্গে চল্ জুড়ব রে গান এই মোরা চারজন।
কাঠের চাকা কাঠের চাকা আর সে চাকার বেড়,
বউমা আমার চারজনা সাঁই, এই হয়েছে ঢের।

খুদে গাইয়ের গান শুনে খুশি হয়ে সন্ত নিজের খঞ্জনীটা তাকে দিয়ে বলেন, “মা, আজীবন আমার আশীর্বাদ থাকবে তোর উপর। তুই তামাম দুনিয়াটার বোধোদয় করবি।”

ভিডিওটিতে মীরা উমপকে প্রথাগত ভারুড গাইতে দেখুন, ব্যঙ্গ ও উপমার সমাহারে রচিত এই জাতীয় গানকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়

সালটা ছিল ১৯৭৫। ওই সন্ত আর কেউ নন, স্বয়ং তুকড়োজি মহারাজ — যিনি গ্রাম গীত ধারায় গান লেখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, তাঁর লেখায় ফুটে ওঠত গ্রাম্যজীবনের দুর্ভোগ ও বিপদ-আপদ, আর সেসব থেকে মুক্তির উপায়। সেদিনের ওই চঞ্চল মেয়েটি আজ ৫০ বছর পরেও গান গেয়ে মঞ্চে আগুন লাগায়। নৌভরি সুতির শাড়ি গায়ে, কপালে বড়ো একখান টিপ পরে, বাঁহাতে দিমড়ি নামে একধরনের ছোটো ঘাতযন্ত্র নিয়ে মীরা উমপ যখন ভীম গীত গান, ডানহাতের আঙুলগুলো অপূর্ব এক ছন্দের উদ্যমে নাচতে থাকে চামড়ার ঝিল্লিতে। দিমড়ির কানায় আঁটা রুনুঝুনু ঘণ্টা আর তাঁর হাতের চুড়ি দুইয়ে মিলে এক হয়ে ধরে থাকে লয়। না জানি কোন জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে চারিদিক।

खातो तुपात पोळी भीमा तुझ्यामुळे
डोईवरची
गेली मोळी भीमा तुझ्यामुळे
काल
माझी माय बाजारी जाऊन
जरीची
घेती चोळी भीमा तुझ्यामुळे
साखर
दुधात टाकून काजू दुधात खातो
भिकेची
गेली झोळी भीमा तुझ्यामुळे

ঘি চুবিয়ে খাচ্ছি রুটি, তুঁহার তরে ভীম!
নেইকো মাথায় কাঠের বোঝা, তুঁহার তরে ভীম!
এই তো রে কাল আম্মা আমার কিনল বাজার গিয়ে
নিজের লগে জরির ব্লাউজ, তুঁহার তরে ভীম!
মিছরি গুলে দুধের গ্লাসে খাচ্ছি কাজু দিয়ে,
চুলোয় গেল ভিক্ষেবাটি, তুঁহার তরে ভীম!

*****

জন্মের তারিখ মনে নেই মীরাবাইয়ের, শুধু সালটুকুই মনে করে জানালেন আমাদের — ১৯৬৫। মহারাষ্ট্রের অন্তরওয়ালি গাঁয়ে এক হতদরিদ্র মাতঙ পরিবারে জন্ম নেন তিনি। এ রাজ্যের তফসিলি জাতির তালিকায় নিবন্ধিত মাঙতদের ঐতিহাসিক ভাবে ‘অচ্ছুৎ’ বলে ধরা হয়, জাতপাতের অনুক্রমে তাঁদের স্থান সব্বার নিচে।

বাবা ওয়ামনরাও ও মা রেশমাবাই বীড জেলার গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে সুরেলা ভজন ও অভঙ্গ গেয়ে ভিক্ষে করতেন। ‘গুরু ঘরানার’ পরিবার হিসেবে বেরাদরির সব্বাই তাঁদের ইজ্জত দিত। দলিত সমাজে গুরু ঘরানার মানুষদের জ্ঞান ও শিক্ষার আধার বলে ধরা হয়, গানবাজনার শিল্পরীতি এঁরাই সংরক্ষণ করে থাকেন। সুতরাং মীরা উমপ কোনওদিন স্কুলের চৌকাঠ না ডিঙোলেও মা-বাবার থেকে পাওয়া অভঙ্গ, ভজন ও কীর্তনের এক সমৃদ্ধ খাজানা নিয়ে বড়ো হয়েছেন।

PHOTO • Vikas Sontate

মহারাষ্ট্রে শাহির মীরা উমপই একমাত্র মহিলা যিনি দিমড়ি ও খঞ্জিরি বাজান। এযাবৎ প্রথাগত ভাবে যে বাদ্যযন্ত্রগুলো শুধু পুরুষরাই বাজিয়ে এসেছেন, সেগুলোয় অপার দক্ষতা হাসিল করেছেন তিনি

পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে — আটটি সন্তানের পেটের ভাত জোগাতে নাজেহাল হয়ে যেতেন দম্পতিটি। সন্তানদের মধ্যে মীরাই সবার বড়ো। সাত বছর বয়স হতে না হতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে গান গাইতে বেরোতে লাগলেন মীরাবাই। ওয়ামনরাও একতারি বাজাতেন আর মীরার ছোটকা ভাউরাও দিমড়িতে তাল ধরতেন। “বাবা আর কাকা দুজনে একসঙ্গে ভিক্ষে করে বেড়াতেন,” তাঁর গানের কিস্যা শোনাতে গিয়ে মীরাবাই জানালেন, “একবার কী হয়েছিল জানেন, সকালের পাওয়া ভিক্ষের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে গিয়ে দুভাইয়ে মারামারি বেধে যায়। শেষে ঝামেলাটা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে দুজন যে যার মতো পথ বেছে নেয়।”

সেদিনের পর ভাউরাও বুলঢানায় গেলে ওয়ামনরাও বড়োমেয়েকে তার কাকার সঙ্গে পাঠিয়ে দিতেন। ছোটকার পিছু পিছু কচিগলায় গাইতে লাগেন মীরাবাই, ধীরে ধীরে অজস্র ভক্তিগীতি তুলে নেন। “বাবা বরাবর বিশ্বাস করত, একদিন না একদিন আমি গাইয়ে হবই,” বললেন তিনি।

পরে, দিনমজুরির বিনিময়ে গাইগরুর দেখভাল করতে করতে তিনি দিমড়িতে হাত পাকানো আরম্ভ করেন। মীরা উমপের কথায়: “ছোটোবেলায় হাঁড়ি-কলসিই আমার বাজনা ছিল। পানি আনতে গিয়ে আঙুল ঠুকে ধাতুর কলসি বাজাতাম। আস্তে আস্তে ওটা অভ্যেসে পরিণত হল, বা শখও বলতে পারেন। জিন্দেগিভর সব এভাবেই শিখেছি, এটাসেটা অন্য কিছু করতে করতে, স্কুলে গিয়ে নয়।”

পাড়ার লোকজন ছোটোখাটো সমাবেশ করে নিয়মিত ভজন গাইতেন, দেখতে দেখতে একদিন মীরাবাইও তাতে যোগ দিয়ে একের পর এক ভজন গাইতে লাগলেন।

राम नाही सीतेच्या तोलाचा
राम बाई हलक्या दिलाचा

রাম সে সীতার জানি ধারেকাছে আসে না
রামের হৃদয়খানি নাব্যতা রাখে না

“কক্ষনো স্কুলে যাইনি বটে, তবে ৪০টা আলাদা আলাদা কিসিমের রামায়ণ আমার কণ্ঠস্থ,” মীরা উমপ জানাচ্ছেন, “শ্রবণ কুমারের কাহিনি, মহাভারত থেকে পাণ্ডবদের গল্প, আর কবীরের শয়ে-শয়ে দোহা, সব আমার মগজে খোদাই করা আছে।” তাঁর বিশ্বাস, রামায়ণ কোনও পাথরে কোঁদা একরৈখিক দাস্তান নয়, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, বিশ্বদর্শন ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একাধিক রামায়ণ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক দুঃখদুর্দশা ও সংগ্রামের নিরিখে বদল এসেছে মহাকাব্যের ভাষ্যে। চরিত্রগুলো এক থাকলেও কিস্যা-কাহিনি নানারঙা ও বহুমুখী হয়ে উঠেছে।

তাঁর আপন অবস্থান থেকে রামায়ণ পরিবেশন করেন মীরাবাই, স্থাপন করেন সমাজের দেহে। তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যেভাবে এ মহাকাব্য পরিবেশন করে, সেটার থেকে এক্কেবারে আলাদা। মীরাবাইয়ের যে রামায়ণ, তার কেন্দ্রে বিরাজমান এক দলিত নারী। রাম কেন সীতাকে অমন একা বনবাসে পাঠিয়েছিল? কেনই বা সে ঋষি শম্বুককে হত্যা করেছিল? বালিকেই বা খুন করেছিল কেন? শ্রোতার দিকে এমনতর অজস্র সওয়াল ছুঁড়ে দেন তিনি। মহাকাব্যের থেকে তুলে আনা জনপ্রিয় গল্পগুলো যুক্তির মোড়কে পরিবেশন করেন। তাঁর জবানে: “গল্পবলার সময় আমি হাসি-মজাকও করে থাকি।”

PHOTO • Ramdas Unhale
PHOTO • Labani Jangi

বাঁদিকে: মীরা উমপের হাতে সন্ত-কবি তুকড়োজি মহারাজের দেওয়া সেই খঞ্জনী, তাঁর সংগীত পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়ে তুকড়োজি যখন এটা দেন, তখন মীরাবাইয়ের বয়স তখন সবে ৭। ডানদিকে: দিমড়ির ছবি — কাঠের বেড় ও চামড়ার ঝিল্লিযুক্ত এই ছোট্ট ঘাতযন্ত্রটি বাজানোয় মীরাবাই ওস্তাদ। খঞ্জিরির ক্ষেত্রে বাইরের বেড়ে অতিরিক্ত ধাতব পাত বা ঘুঙরু লাগানো থাকে, যেগুলো কিনা দিমড়িতে অনুপস্থিত। এটি বাজিয়ে বাজিয়েই দেবদেবীর কিস্যা শোনান লোকশিল্পীরা, এ বাদ্যযন্ত্র তাঁদের উপাসনায় অপরিহার্য

মীরাবাইয়ের সাংগীতিক জ্ঞান যেমন সুগভীর, তেমনই সুচারু তাঁর গাইবার ঢং ও পরিবেশন। সত্যিই তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়ায় যাঁর অনুগামীর সংখ্যা বিশাল, সেই প্রভাবশালী সন্ত-কবি তথা সমাজ সংস্কারক তুকড়োজি মহারাজের ঘরানা ও পদানুসরণ করে সাফল্যের বহু শিখর ছুঁয়েছেন মীরাবাই উমপ।

তুকড়োজি মহারাজ কীর্তন গাইতে বসলে খঞ্জিরি বাজাতেন। ওঁর শিষ্য সত্যপাল চিঞ্চোলিকর সপ্ত-খঞ্জিরি বাজান, এতে সাত-সাতখানা খঞ্জনী হতে নানান সুর ও শব্দ নির্গত হয়। সাঙ্গলির দেবানন্দ মালি ও সাতারার মহলারি গজভরেও এই একই যন্ত্র বাজান। তবে মহিলাদের মধ্যে মীরাবাই উমপ-ই একমাত্র খঞ্জনী বাজান, তাও আবার এমন দক্ষতার সঙ্গে।

মীরাবাইকে চরম দক্ষতার সঙ্গে খঞ্জিরি বাজাতে দেখে এবং তাঁর সুমধুর কণ্ঠ শুনে মোহিত হয়ে পড়েন লাতুরের শাহির রত্নাকর কুলকর্ণি — ইনি গানও লিখতেন আবার ডাফও (ডুবকি সদৃশ একপ্রকারের ঘাতযন্ত্র, শাহিররা এটা হামেশাই ইস্তেমাল করে থাকেন) বাজাতেন। মীরাবাইকে শাহিরি (সামাজিক বোধোদয়ের গীত) পরিবেশনে সহায়তা ও অনুপ্রাণিত করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। ২০ বছর বয়েসে শাহিরির জগতে পদার্পণ করেন মীরা উমপ, শুরু হয় বীডের সরকারি ফাংশনে গানবাজনা।

“সবকটা ধর্মীয় শাস্ত্র আমার মুখস্থ ছিল। কথা, সপ্তাহ্, রামায়ণ, মহাভারত, সত্যবান-সাবিত্রীর গল্প, মহাদেবের প্রত্যেকটা গান আর কাহিনি, পুরাণ, এসব আমার ঠোঁটের ডগায় নাচত,” তিনি বললেন, “রাজ্যের কোনায় কোনায় এসব গল্পগাথা শুনিয়েছি, গেয়েছি, পরিবেশন করেছি। কিন্তু একটিবারের জন্যও সন্তুষ্টি পাইনি, ভিতরটা খালি খালিই রয়ে গেছে। ওসব গান যাঁরা শুনতেন, তাঁদেরকেও কোনও নতুন পথ দেখাতে পারিনি।”

মীরাবাইয়ের হৃদয় কেবল তাঁরাই ছুঁয়েছিলেন যাঁরা সামাজিক যন্ত্রণা ও বহুজন জাতিসমূহের দুর্ভোগের কথা বলতেন — যেমন বুদ্ধ, ফুলে, শাহু, আম্বেদকর, তুকড়োজি মহারাজ ও গাডগে বাবা। “পহেলা ভীমগীতটা আমায় বিজয়কুমার গাওয়াই শিখিয়েছিলেন, সেটা ছিল আমার পরিবেশন করা প্রথম ওয়ামনদাদা কর্দকের গান,” স্মৃতিচারণ করছিলেন মীরাবাই উমপ।

पाणी वाढ गं माय, पाणी वाढ गं
लयी नाही मागत भर माझं इवलंसं गाडगं
पाणी वाढ गं माय, पाणी वाढ गं

এট্টুখানি জল দে আমায়, এট্টুখানি পানি।
খুব বেশি নয়, ছোট্ট গাডগ ভরতে লাগে যত,
এট্টুখানি জল দে আমায়, এট্টুখানি পানি।

“সেইদিন থেকেই এসব পোতি পুরান [পুঁথি-পুরাণ] গাওয়া ছেড়ে ভীমগীত গাইতে শুরু করেছি।” ১৯৯১, অর্থাৎ বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্ম শতবার্ষিকী থেকে নিজের জান-মান ভীমগীতের প্রতি উৎসর্গ করেছেন মীরাবাই উমপ। ভীমগীতে প্রচারিত হয় বাবাসাহেবের বাণী, একইসঙ্গে এ গান তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর এক মাধ্যমও। শাহির মীরাবাইয়ের কথায়: “মানুষ এই গান প্রচণ্ড ভালবাসে, সর্বশক্তি দিয়ে সাড়া দেয়।”

মীরা উমপের কণ্ঠে একটি ভীমগীত শুনুন

শাহির’ কথাটা ফার্সি ‘শায়ের’ বা ‘শাইর’ থেকে এসেছে। গ্রামীণ মহারাষ্ট্রের শাহিররা বহুযুগ ধরে রাজারাজড়ার জয়গান বা পোয়াডা লিখে আসছেন। তবে খঞ্জিরি হাতে আত্মারাম সালভে , হারমোনিয়াম নিয়ে দাদু সালভে বা একতারি (একতন্ত্রী ল্যূট-জাতীয় বাদ্যযন্ত্র) হাতে কাদুবাই খারাতের কথা আলাদা, তাঁরা তাঁদের স্বরচিত গানের মাধ্যমে দলিত চেতনা জাগ্রত করেছেন। আর মহারাষ্ট্রের মুষ্টিমেয় মহিলা শাহিরদের মাঝে দিমড়ি হাতে জায়গা করে নিয়েছেন মীরাবাই। ওঁর আগে অব্দি দিমড়িকে যুদ্ধের বাজনা বলেই ধরা হত, যা কেবলমাত্র পুরুষরাই বাজাতেন। সুতরাং, মীরা উমপ তাঁর দিমড়ি দিয়ে সমাজের আরও একটি আগল ভেঙেছেন।

তাঁকে একবার গাইতে বা বাজাতে শুনলে ভুলতে পারবেন না। যেভাবে ঝিল্লির বিভিন্ন অংশে সুপটু আঙুলে টোকা মেরে নানান স্বর তোলেন, যেভাবে কীর্তন, ভজন ও পোয়াডার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুরের তারতম্য সৃষ্টি করেন, তা সত্যিই মায়াময়। ধীরে ধীরে লয় বাড়তে থাকে তাঁর গানে। শব্দ, সংগীত, পরিবেশন, সব্বার শিকড় শক্ত করে গাঁথা রয় মাটিতে, অথচ সুরতালের গমকে ফুটে ওঠে এক ভয়ডরহীন মানস। এই যে দিমড়ি ও খঞ্জনীর শিল্প আজও দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে, সে যে মীরাবাইয়ের আত্মোৎসর্গেরই ফসল।

তিনি বাদে কেবল হাতে গোনা জনাকয় মহিলা শাহির-ই ভারুড পরিবেশন করেন — লোকশিল্পের এই রকমটি মূলত মহারাষ্ট্রের সন্ত-কবিরাই চর্চা করতেন। ভারুড দুই ধরনের হয় — ভজনি ভারুড, যেটার কেন্দ্রে থাকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা, এবং সোঙ্গি ভারুড, যেখানে পুরুষরা মেয়ে সেজে মঞ্চে উঠে প্রদর্শন করেন। সে ঐতিহাসিক ও সামাজিক বিষয়ে পোয়াডা বলুন বা ভারুড, এগুলো সাধারণত পুরুষরাই করে এসেছেন। তবে এই বৈষম্যের কেল্লায় সদর্পে হামলা করেছেন মীরা উমপ, সবরকমের শিল্পকলা সমান তেজ ও উদ্যম নিয়ে পরিবেশন করতে শুরু করেন তিনি। জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁর গানবাজনা কয়েকজন পুরুষ শিল্পীকেও হার মানায়।

তবে হ্যাঁ, দিমড়ি হাতে গানবাজনা, নাটক, শ্রোতা-দর্শকের প্রতি বার্তা — মীরাবাইয়ের কাছে এসব আদতে নিছক মনোরঞ্জনের চাইতে অনেকখানি বেশি।

*****

এই মুলুকে শিল্পের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো হয় জাতপাত, স্রষ্টার জাতবর্ণই হয়ে ওঠে তাঁর সৃষ্টির মাপকাঠি। মানুষ যে যার জাতের দুনিয়া চিনতে-বুঝতে শেখে, যার মধ্যে সংগীত সহ অন্যান্য শিল্পকলাও রয়েছে। একজন অ-দলিত, অ-বহুজন কি কোনদিনও এইসকল বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপি লিখতে বা পড়তে পারবে? তার দ্বারা কি এগুলো বাজানো সম্ভব? অন্য জাতের কেউ দিমড়ি বা সম্বল (জোড়া-তবলার মতো দেখতে একপ্রকারের ঘাতযন্ত্র) বা জুম্বারুক (চামড়ার তারযুক্ত একতারি) বাজাতে যতই ইচ্ছুক হোক না কেন, সেটা না-মুমকিন, কারণ এগুলোর কোনও বাঁধাধরা ব্যাকরণ নেই।

মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা আজ খঞ্জিরি ও দিমড়ি বাজাতে শিখছে। কৃষ্ণ মুসালে ও বিজয় চহ্বানের মতো খ্যাতনামা সংগীতশিল্পীরা এই দুটি ঘাতযন্ত্রের স্বরলিপি বানিয়ে দিয়েছেন। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-কলা আকাদেমির পরিচালক গণেশ চন্দনশিবে জানাচ্ছেন, তাতেও ঝক্কির শেষ নেই।

PHOTO • Medha Kale
PHOTO • Ramdas Unhale

বাঁদিকে: মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-কলা আকাদেমির পরিচালক গণেশ চন্দনশিবে। না দিমড়ি না সম্বল, দুটির একটিরও যে কোনও নিজস্ব সংগীততত্ত্ব নেই, সেটা তিনি স্বীকার করছেন। তাঁর কথায়, ‘আজ পর্যন্ত কেউ এদের স্বরলিপি লেখেনি, কিংবা ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রের তকমা সেঁটে ‘বিজ্ঞান’ নির্মাণ করেনি।’ ডানদিকে: অথচ কোনও বিজ্ঞান, স্বরলিপি কিংবা সাংগীতিক ব্যাকরণ না জেনেই এ বাদ্যযন্ত্রের জ্ঞান আরোহন করে ফেলেছেন মীরাবাই

“আর পাঁচটা ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রের মতন করে দিমড়ি, সম্বল বা খঞ্জিরি শেখাতে পারবেন না। ওভাবে কেবল তবলা শেখানো বা শেখা যায়, তার কারণ ওটার জন্য আমরা স্বরলিপি বানিয়ে ফেলেছি। লোকে ওই ধরনের স্বরলিপি দিয়ে দিমড়ি বা সম্বলও শেখানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ দুটি বাদ্যযন্ত্র একটিরও নিজস্ব কোনও সংগীততত্ত্ব নেই। আজ অবধি কেউ এদের স্বরলিপি লেখেনি, কিংবা ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রের তকমা সেঁটে ‘বিজ্ঞান’ নির্মাণ করেনি,” ভালো করে বোঝালেন গণেশ বাবু।

অথচ কোনও ‘বিজ্ঞান’, স্বরলিপি বা সংগীতের ব্যাকরণ না জেনেই দিমড়ি ও খঞ্জনী বাজানোয় ওস্তাদ হয়ে উঠেছেন মীরা উমপ। বাজনাদুটোয় হাত পাকানোর সময়ে কোনটা ধা, কোনটা তা, কিসুই জানতেন না। অথচ তাঁর লয় ও তালের নৈপুণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আচ্ছা আচ্ছা ধ্রপদী যন্ত্রশিল্পীও কাবু হয়ে যাবেন। এ বাদ্যযন্ত্র তাঁর রক্তমাংসের বিরাসত। লোক-কলা আকাদেমিতে এমন একজনও কেউ নেই যে কিনা দিমড়ি বাজানোয় মীরাবাইয়ের ধারেকাছে আসে।

বহুজন জাতিসমূহ ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তের পর্যায়ে উঠে আসছে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের প্রথাগত শিল্প ও অভিব্যক্তির ঘরানা হারিয়ে ফেলছেন। শিক্ষা ও কামকাজের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখো হওয়ায় পরম্পরাগত পেশা ও তার সঙ্গে যুক্ত শিল্পধারাগুলি ফেলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এই জাতীয় শিল্পকলার দস্তাবেজিকরণ, তাদের উৎস ও অনুশীলনের ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক প্রসঙ্গ বোঝা — এসব আজ মারাত্মক ভাবে জরুরি। নইলে আমাদের সামনে মাথাচাড়া দেওয়া হাজারও সওয়ালের জবাব দেওয়া অসম্ভব। যেমন ধরুন, জাতপাতের লড়াই কিংবা অন্য ধরনের সংঘর্ষ কি তাঁদের অভিব্যক্তির উপর ছাপ ফেলে? আর তাই যদি হয়, তাহলে ঠিক কী কী আকারে সে ছাপ ব্যক্ত হয়? বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এসকল শিল্পধারার উপর কেতাবি চোখ মেলতে গিয়ে এ বিষয়ে নিতান্তই অসফল হচ্ছে।

প্রতিটি জাতির ঝুলিতে একটি করে নির্দিষ্ট লোকশিল্প রয়েছে, এই বৈচিত্র্যের কূল-কিনারা মাপতে যাওয়া নিছক বোকামি। এইসব খাজানা ও প্রথাসমূহ অধ্যয়ন করে মহাফেজখানা বানাতে সক্ষম, এমন একটি নিবেদিত গবেষণাকেন্দ্র খুব দরকার। অথচ অব্রাহ্মণ্যবাদী এমন একটিও আন্দোলন নেই, যাদের ইস্তেহারে এ বিষয়টি ঠাঁই পেয়েছে। তবে মীরাবাই এই ছবিটা বদলাতে চান। “আমি এমন একখান প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই যেখানে নতুন প্রজন্ম খঞ্জিরি, একতারি আর ঢোলকি বাজাতে শিখবে,” জানালেন তিনি।

এমন উদ্যোগের জন্য রাজ্যস্তরে কোনও সহায়তা তিনি পাননি। সরকারকে আর্জি জানিয়েছেন কি? “আমি কি আর লিখতে পড়তে জানি গো?” সোজাসাপ্টা জবাব। “যখনই কোনও ফাংশনে যাই, সে যে চুলোতেই হোক না কেন, সেখানে যদি কোনও রাজ্য সরকারি আধিকারিক থাকেন, আমি তাঁদের কাছে গিয়ে আবেদন জানাই, এ খোয়াব বাস্তব করে তুলতে মদত চাই। কিন্তু আপনার কি সত্যি মনে হয় রাষ্ট্রের চোখে গরিব ইনসানের শিল্পের কোনও দাম আছে?”

PHOTO • Labani Jangi
PHOTO • Labani Jangi

ডাফ — শাহিররা পোয়াডা (জয়গান) পরিবেশনের সময় এই ঘাতযন্ত্রটি বাজিয়ে থাকেন; টুনটুনে — গোন্ধলি সম্প্রদায়ের মানুষ এই একতন্ত্রী যন্ত্রটি বাজিয়ে ‘ভবানী আই’-এর (তুলজাভবানী) দোয়া কামনা করেন। ডানদিকে: কিঙ্গরি নামক এই বাজনাটির উদ্ভাবক ডক্কলওয়ার জাতির মানুষরা। এটির অনুরণক বাক্সটি বার্ণিশ না-করা পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি, এর ভিতর দিয়ে গোঁজা লাঠিটা গ্রীবার কাজ করে। ছবিতে আরেক ধরনের কিঙ্গরি দেখা যাচ্ছে যেটায় তিনখানা অনুরণক বাক্স রয়েছে, সুর বসানো ও বাজানোর অংশটি ময়ূরের আকারে কাঠ কুঁদে বানানো

PHOTO • Labani Jangi
PHOTO • Labani Jangi

বাঁদিকে: যে কোনও দেবীর আরাধনার সময় পালিত হয় গোন্ধল নামের একটি আচার, তখন এই জোড়া-তবলার মতো দেখতে চামড়ার ঝিল্লিযুক্ত সম্বল যন্ত্রটি বাজানো হয়ে থাকে। সম্বল বাজানো দুটি কাঠি লাগে, একটির মাথা আঁকশির মতো। গোন্ধলি সম্প্রদায়ের মানুষ এই ঘাতযন্ত্রটি বাজান। ডানদিকে: পালাপার্বণ, বিয়ের শোভাযাত্রা এবং মন্দির-দরগায় অন্যান্য আচারের সময় মাঙ জাতির পুরুষরা এই হালগি নামের যন্ত্রটি বাজান। কাষ্ঠনির্মিত গোলাকার এই ঘাতযন্ত্রটি খানিকটা ডাফলির মতো দেখতে

*****

অবশ্য মীরাবাই কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তাঁর শাহিরি ও গীত যখন দলে দলে শ্রোতাদের মন জয় করতে লাগল, মহারাষ্ট্র সরকার তার অসংখ্য সচেতনতা অভিযানে তাঁকে যোগ দিতে অনুরোধ করে। অচিরেই মহারাষ্ট্রের দৈর্ঘ্যপ্রস্থ জুড়ে ঘুরতে লাগলেন মীরা উমপ; স্বাস্থ্য, নেশামুক্তি, কন্যাপণ-রদ ও মদ-নিষিদ্ধকরণের মতো বিষয়ে লোকসংগীতের উপাদান মিশিয়ে ছোটো-ছোটো প্রহসন পালা মঞ্চস্থ করতেন।

बाई दारुड्या भेटलाय नवरा
माझं नशीब फुटलंय गं
चोळी अंगात नाही माझ्या
लुगडं फाटलंय गं

বরটা আমার হদ্দ মাতাল
নসিব পুড়ে ছাই,
পরার মতো নেইকো ব্লাউজ
শাড়ি ফর্দাফাঁই।

নেশামুক্তি ঘিরে তাঁর সচেতনতা অভিযানের সুবাদে মহারাষ্ট্র সরকারের থেকে ব্যসনমুক্তি সেবা পুরস্কার পেয়েছেন মীরাবাই। তাছাড়া আকাশবাণী ও দূরদর্শন থেকেও সংগীত পরিবেশনার ডাক মিলেছে।

*****

এমন মহৎ কর্মযজ্ঞ সত্ত্বেও বড়ো কষ্টেসৃষ্টে কেটেছে এ শাহিরের জীবন। “মাথার উপর ছাদ হারাই, পাশে তখন কেউই ছিল না,” তাঁর সাম্প্রতিকতম বিপদের কথা বললেন মীরাবাই। “তখন লকডাউন [২০২০] চলছে, হঠাৎ একদিন শর্টসার্কিট হয়ে বাড়িতে আগুন লেগে যায়। হালত এতটাই খারাপ ছিল যে ভিটেখান বেচতে বাধ্য হই। শেষে রাস্তায় এসে দাঁড়াই। আম্বেদকরবাদী অনেকে মিলে এই ঘরটা বানাতে সাহায্য করেছেন,” তাই এই নতুন বাড়িটার ছাদ ও দেওয়াল সবই টিন দিয়ে বানানো, আমরা সেখানেই বসে কথা বলছিলাম।

PHOTO • Ramdas Unhale
PHOTO • Ramdas Unhale

লোকশিল্পী তথা পরিবেশক শাহির মীরা উমপ, অসংখ্য শিরোপা ও খেতাব জিতলেও দুঃখ-দুর্দশা তাঁর পিছু ছাড়তে চায় না। ছত্রপতি সাম্ভাজি নগরের চিকলথানায়, এই ছোট্ট টিনের ঘরটিই তাঁর একমাত্র আশ্রয়

আন্নাভাউ সাঠে, বাল গান্ধর্ব তথা লক্ষ্মীবাই কোলাপুরকরের মতন তাবড় তাবড় ওস্তাদের নামে নামাঙ্কিত পুরস্কার যাঁর ঝুলিতে, সেই মহান শিল্পীর নাকি শেষে এই হাল! সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের থেকে একটি রাজ্য খেতাবও তিনি পেয়েছেন। এককালে মীরাবাইয়ের বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে শোভা পেতো এই সকল পুরস্কার।

“বলছি শুনুন, ওসবে শুধুই চোখ জুড়োয়,” ছলছলে দুই আঁখি নিয়ে বলে উঠলেন মীরা উমপ, “ওসব দেখে থোড়াই না পেট ভরবে? করোনার সময় পেটে কিল মেরে পড়েছিলাম। এমন আতান্তর যে কাঠের বদলে ওই খেতাব-টেতাব পুড়িয়েই চাট্টি খাবার রাঁধতে বাধ্য হই। এসব পুরস্কারের চেয়ে খিদে ঢের শক্তিশালী।”

স্বীকৃতি মিলুক বা না মিলুক, অতন্দ্র আত্মোৎসর্গের সঙ্গে স্বীয় শিল্পের পথে হেঁটে হেঁটে মানবিকতা, প্রেম ও করুণার বাণী ছড়িয়ে চলেছেন শাহির মীরাবাই, এ যে সেই কিংবদন্তি বনে যাওয়া সমাজ সংস্কারকদের দেখিয়ে যাওয়া রাস্তা। শিল্প ও গানবাজনা দিয়ে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের আগুন নিভিয়ে চলেছেন তিনি। মীরাবাইয়ের নিজের কথায়: “আমি হাটেবাজারে আমার শিল্প বেচতে চাই না। সম্ভালালি তার তী কলা আহে, নহি তার বালা আহে [ইজ্জত দিলে সেটা শিল্প। নইলে এ শুধুই মুসিবত]।”

“আমি আমার শিল্পের চরিত্র ধরে রেখেছি। গত ৪০ বছর ধরে এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে গিয়ে কবীর, তুকারাম, তুকড়োজি মহারাজ ও ফুলে-আম্বেদকরের বাণী ছড়িয়ে এসেছি। আজও ওঁদের গান গেয়ে চলেছি, আমার গানবাজনায় বেঁচে আছে তাঁদের বিরাসত।”

“শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভীমগীত গেয়ে যাব। ওটা দিয়েই আমার জিন্দেগি খতম হবে, আর তাতেই আমার চরম তৃপ্তি।”

এই মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদনটি ‘ইনফ্লুয়েনশিয়াল শাহিরস্, ন্যারেটিভস্ ফ্রম মারাঠওয়াড়া’ নামক একটি সংকলনের অংশ। পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় এবং আর্কাইভস্ অ্যান্ড মিউজিয়াম প্রোগ্রামের আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করেছে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস্। নয়াদিল্লির গ্যোটে ইনস্টিটিউট/ম্যাক্স ম্যুলার ভবনের আংশিক সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভবপর হয়ে উঠত না।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Keshav Waghmare

Keshav Waghmare is a writer and researcher based in Pune, Maharashtra. He is a founder member of the Dalit Adivasi Adhikar Andolan (DAAA), formed in 2012, and has been documenting the Marathwada communities for several years.

Other stories by Keshav Waghmare
Editor : Medha Kale

Medha Kale is based in Pune and has worked in the field of women and health. She is the Marathi Translations Editor at the People’s Archive of Rural India.

Other stories by Medha Kale
Editor : Pratishtha Pandya

Pratishtha Pandya is a Senior Editor at PARI where she leads PARI's creative writing section. She is also a member of the PARIBhasha team and translates and edits stories in Gujarati. Pratishtha is a published poet working in Gujarati and English.

Other stories by Pratishtha Pandya
Illustrations : Labani Jangi

Labani Jangi is a 2020 PARI Fellow, and a self-taught painter based in West Bengal's Nadia district. She is working towards a PhD on labour migrations at the Centre for Studies in Social Sciences, Kolkata.

Other stories by Labani Jangi
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra is the Content Manager of PARIBhasha, the Indian languages programme at People's Archive of Rural India (PARI). He has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata and is a multilingual poet, translator, art critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra