একটু খাওয়ার জলের জন্য রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করতে হয় গঙ্গুবাই চহ্বানকে। “সরকার! পাহারাদার সাহেব! আমাদের একটু খাওয়ার জল দিন। আমি এখানেই থাকি, স্যার।”

কিন্তু শুধু কাকুতিতে চিড়ে ভেজে না। তাঁকে আশ্বাস দিতে হয়, “আপনার বাসনকোসনে হাত দেব না।”

জলের জন্য আশপাশের বাড়ির কল, চায়ের দোকান, বিয়েবাড়ি ইত্যাদির উপর নির্ভর করেন গঙ্গুবাই (নাম পরিবর্তিত)। নান্দেদ শহরের গোকুলনগর এলাকার ফুটপাথে তাঁর ‘বাড়ি’র উল্টোদিকের হোটেল ইত্যাদি নানান বহুতল ও বাড়ির পাহারাদারদের কাছে গিয়ে গিয়ে জল ভিক্ষা করেন তিনি। আর এই ভিক্ষা তাঁকে করতে হয় প্রতিদিন, যতবার তাঁর জল লাগে ততবার।

জল জোগাড় করা নিত্যদিনের কাজ, আর তাঁর এই কাজ আরও কঠিন হয়ে ওঠে তাঁর জন্মপরিচয়ের কারণে – একদা ‘অপরাধপ্রবণ জনজাতি’ হিসেবে নথিভুক্ত ফাঁসে পারধি জনজাতির সদস্য তিনি। ঔপনিবেশিক যুগের এই বিভাজনটি ১৯৫২ সালে খারিজ করে ভারত সরকার। তবুও, তার ৭০ বছর পরেও গঙ্গুবাইয়ের মতো মানুষদের জলের মতো প্রাথমিক অধিকারগুলির জন্য নিত্যদিন লড়াই করতে হয়; এক ড্রাম জল পেতে হলে আগে তাঁকে বাকিদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তিনি আদতেই চোর-ডাকাত নন।

“আমরা যদি বলি ‘আপনারা এখানে যা কিছু রাখেন কোনওদিন আমরা সেগুলো ছুঁই না’, তবেই একমাত্র কিছুটা জল পাওয়া যায়,” জানালেন গঙ্গুবাই। অনুমতি পেলে হাতের কাছে থাকা ছোটোখাটো পাত্র, প্লাস্টিকের ড্রাম আর বোতলে করে যতটা পারা যায় জল ভরে রাখেন তিনি। একটা হোটেল ফিরিয়ে দিলে দুর্মুখ হোটেল মালিকদের কথায় কান না দিয়ে পরের হোটেলে যান; প্রায়শই চার-পাঁচটা জায়গা ঘুরে তবে কেউ না কেউ নরম হয়, আর খাওয়া, রাঁধা, এবং ঘরের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় জলটুকু জোগাড় করতে দেয় তাঁকে।

A settlement of the Phanse Pardhi groups on the municipal grounds of Gokulnagar in Nanded. Migrants and transhumants live here on footpaths
PHOTO • Prakash Ransingh
A settlement of the Phanse Pardhi groups on the municipal grounds of Gokulnagar in Nanded. Migrants and transhumants live here on footpaths
PHOTO • Prakash Ransingh

নান্দেদের গোকুলনগরে পুরসভার জমিতে ফাঁসে পারধি জনজাতির বসতি। বহু অভিবাসী এবং পরিযায়ী মানুষ এখানকার ফুটপাথগুলিতে বসবাস করেন

Left: Children taking a bath near the road settlements. Right: An enclosure created for men to bath
PHOTO • Prakash Ransingh
Left: Children taking a bath near the road settlements. Right: An enclosure created for men to bath
PHOTO • Prakash Ransingh

বাঁদিকে: রাস্তার ধারে স্নান করছে বসতির শিশুরা। ডানদিকে: পুরুষদের স্নান করার জন্য ঘেরা একটি ছাউনি

গঙ্গুবাইয়ের মতো অভিবাসীরা মহারাষ্ট্রের অন্য নানা জেলা ও গ্রাম থেকে নান্দেদে আসেন কাজের খোঁজে। “আমরা এখানে (নান্দেদ) আট মাস মতো থাকি, তারপর বর্ষা নেমে গেলে গ্রামে ফিরে যাই,” জানালেন তিনি। খোলা মাঠ, ফুটপাথ, ওভারহেড জলের ট্যাংকের নিচের জায়গা, রেল স্টেশনে ছোটো ছোটো ছাউনি বানিয়ে আস্তানা পাতে অভিবাসী পরিবারগুলি, বাদ যায় না ভাগাড়ও। উদ্দেশ্য, এখানে যতদিন আছে বিবিধ কাজকর্ম করে টাকা জোগাড় করা। প্রয়োজনমতো ছাউনিসমেত অন্যত্র উঠে যেতে সদাপ্রস্তুত থাকতে হয়।

শহরের কোথাও অভিবাসী এবং পরিযায়ী মানুষদের জল সরবরাহ করার কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। শিশু, মহিলা, এবং বিশেষ করে অল্পবয়সি মেয়েদের নিত্যদিন হেনস্থা, অপমান তো বটেই, শারীরিক হিংসাও সহ্য করতে হয় পানীয় জলের সন্ধানে বেরিয়ে।

কাজের খোঁজে এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ভিড় জমান গোকুলনগর, ডেগলুর নাকা, সিডকো রোড এলাকা এবং হুজুর সাহিব রেল স্টেশনে; এখানে থাকেন যতদিন না অন্য শহরে চলে যেতে, বা নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে পারছেন।

এখানকার অভিবাসীরা বেশিরভাগই ফাঁসে পারধি, ঘিসাড়ি এবং ভাদার জনজাতির মানুষ, উত্তরপ্রদেশের লখনউ এবং কর্ণাটকের বিদর থেকেও আসেন অনেকে; আসেন মুসলিম, চামার, এবং তেলেঙ্গানার যোগীরা। নিজ নিজ সাবেক বংশানুক্রমিক পেশায় আছেন এঁরা, এখানে আসেন নতুন কাজের খোঁজে। হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি, পেন, বেলুন, মাদুর, কাচের বাসন, খেলনা ইত্যাদি বিক্রি করেন অনেকে, অনেকে ট্র্যাফিক সিগনালে ভিক্ষা করেন, বা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাঁচার জন্য যা যা করতে হয় আরকি।

ঘিসাড়ি পরিবারের কাজল চহ্বান বাসা বেঁধেছেন সিডকো এমআইডিসি রোডের উপর, জানালেন জলের খোঁজে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতে হয়। “রাস্তায় জলের ট্যাংকার গেলে মাঝে মাঝে ওদের থেকে জল চাই। বদলে ওদের কাজ করে দিতে হয়,” জানালেন তিনি। তিনি একা নন। পুরসভার মাঠের বাসিন্দারা জানালেন ব্যক্তিগত মালিকানার কলগুলি থেকে জল নিতে গেলেও মালিকদের কাছে বেগার খাটতে হয়।

কলের জল জোটাতে না পারলে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হয়। গোকুলনগরের ফুটপাথে পুরসভার জল সরবরাহ পাইপলাইনের একটি চেম্বার আছে। সেই ঘর থেকে উপচে পড়া জল সামনের একটি গর্তে জমা হয়। “চেম্বারের জল আসে [পাইপলাইন থেকে] হপ্তায় দুই বার। ওখানে জল এলে রীতিমতো উৎসব লেগে যায়,” জানালেন গোকুলনগরের এই স্থানীয় আখের রস বিক্রেতা।

A collection of containers lined up to collect water. Their temporary homes on the side of a road  (right)
PHOTO • Prakash Ransingh
A collection of containers lined up to collect water. Their temporary homes on the side of a road  (right).
PHOTO • Prakash Ransingh

জল নেওয়ার জন্য সার দিয়ে রাখা নানা ধরনের পাত্র। রাস্তার ধারে অস্থায়ী ছাউনি (ডানদিকে)

A Ghisadi family (right) makes iron tools using different alloys (left)
PHOTO • Prakash Ransingh
A Ghisadi family (right) makes iron tools using different alloys (left)
PHOTO • Prakash Ransingh

ঘিসাড়ি পরিবারটি (ডানদিকে) নানান মিশ্র ধাতু (বাঁদিকে) ব্যবহার করে লোহার যন্ত্রপাতি বানায়

বাচ্চারা আকারে খুদে বলে সহজেই গর্তে নেমে জল তুলতে পারে। কাছের হোটেলগুলি থেকে মাটি আর বর্জ্য গর্তের জল দূষিত করে দেয়। কিন্তু অভিবাসী পরিবারগুলির গা ধোয়া, কাপড় কাচার জন্য ওই জল ছাড়া উপায় নেই। জলের জন্য এই চেম্বারের উপর নির্ভরশীল এই ফুটপাথের অন্তত ৫০টি পরিবার; সংখ্যাটা সম্ভবত আরও বেশি কিন্তু সঠিক হিসেব রাখা এখানে দুষ্কর।

২০২১ সালের একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, নান্দেদ শহর প্রতিদিন মাথাপিছু ১২০ লিটার জল পায়, মোট ৮০ এমএলডি (মিলিয়ন লিটার) জল। কিন্তু পথবাসীদের কাছে সেই জলের ভাগ পৌঁছায় না।

*****

ডেগুলুর নাকায় একটি ওভারহেড জলের ট্যাংকের তলায় ঠাঁই নিয়েছে খান পরিবার। বীড জেলার পারলির অধিবাসী খানেরা বছরে কয়েকবার নান্দেদে আসেন, বিশেষ করে রমজান মাসের সময়টা এসে হপ্তাদুয়েক থেকে যান।

সুবিশাল সিমেন্টের ট্যাংক মাথার উপর ছাদের কাজ করে, আর জলের জোগাড় হয় আশপাশের হোটেল এবং অনেক দূরের সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের পানীয় জলের ফিল্টারটি থেকে। ৪৫ বছর বয়সি জাভেদ খান জানালেন, “যা জল পাই তাই খাই, নলকূপের হোক বা কলের। ওভারহেড ট্যাংকের ভাল্ভ থেকে চুঁইয়ে পড়া বর্জ্য জলও খাই আমরা।”

অভিবাসীরা জলের জন্য হন্যে হয়ে ঘোরেন, এদিকে ব্যক্তিগত মালিকানায় জলের ফিল্টার কিন্তু চতুর্দিকে আছে – ১০ টাকা দিয়ে পাঁচ লিটার জল কেনা যায়। ঠান্ডা জল পাওয়া যায় ১০ টাকায়, আর এমনি জল পাঁচ টাকায়।

সোলাপুরের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সি নয়না কালে তিন বড়ো শহর মুম্বই-নাসিক-পুণে ঘুরে নান্দেদে এসেছেন। “১০ টাকা দিয়ে যে পাঁচ লিটারের বোতলটা কিনি সেটা দিয়েই চালাতে চেষ্টা করি,” জানালেন তিনি।

Left: Some migrants get access to filtered tap water from a clinic.
PHOTO • Prakash Ransingh
Right: A water pot near Deglur Naka
PHOTO • Prakash Ransingh

বাঁদিকে: একটি চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে পরিশুদ্ধ জল জোগাড় করেন কিছু অভিবাসী। ডানদিকে: ডেগুলুর নাকার কাছে একটি জলের পাত্র

প্রতিদিন শুদ্ধ জল কেনা অনেকেরই সাধ্যে কুলোয় না, তাই তাঁরা বর্জ্য জল কেনেন – রিভার্স অসমোসিস বা আরও পরিশুদ্ধিকরণের পর ফিল্টার থেকে যে জল বেরোয় সেই জলটা। মানুষের পানের অনুপযোগী বলে চিহ্নিত এই জল দিয়েই পানীয় জল এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটান তাঁরা।

“হোটেল থেকে জল চাইলে টাকা দিয়ে কিনতে হবে, নইলে হোটেল ম্যানেজাররা বলবে খদ্দেরদের জন্যই জল নেই, তোমাদের কোত্থেকে দেব?” বলছেন খাতুন পটেল। ৩০ বছর বয়সি খাতুন নান্দেদ স্টেশনের উপকণ্ঠে আস্তানা নিয়েছেন।

গোকুলনগরের এক পাহারাদার জানালেন, “আমাদের কাছে জল থাকে। কিন্তু আমরা ওদের দিই না। জল নেই বলে ভাগিয়ে দিই।”

এক বিয়েবাড়ির মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলছেন, “আমরা ওদের বলেছি [ছাউনির লোকজন] যে ওরা দুই ক্যান জল নিতে পারে, তাও ওরা আরও চাইতে থাকে। আমাদের মিটারের জল আসে, ওর চেয়ে বেশি আমরা বিলিয়ে দিতে পারব না।”

*****

জল জোগাড়ের দায়িত্বটা মূলত পড়ে মহিলা এবং অল্পবয়সি মেয়েদের কাঁধে, এবং প্রত্যাখ্যানের সঙ্গে জড়িত অপমান আর অন্যান্য বিপদগুলিও তাঁদেরই পোহাতে হয়। কিন্তু সেটাই সব নয়। ফুটপাথে সারাক্ষণ লোক চলাচল হয়, আর সাধারণ স্নানঘরের কোনও ব্যবস্থা নেই। “জামাকাপড় পরেই স্নান করতে হয়। চারপাশে এত পুরুষ ঘোরাফেরা করে, খুব তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে ফেলতে হয়। যতই লজ্জা পাই, লোকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। আমরা দ্রুত স্নান সেরে কাপড় ছেড়ে কেচে নিই,” জানালেন সমীরা যোগী। লখনউয়ের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সি সমীরা উত্তরপ্রদেশে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী বা ওবিসি হিসেবে নথিভুক্ত যোগী জনজাতির সদস্য।

ডেগুলুর নাকার পারধি মহিলারা জানালেন তাঁরা স্নান করতে যান আঁধার নামার পর। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সারির পিছনে একটু আড়াল হয়, আর নিজেদের শাড়ি বেঁধে বেঁধে একটা ঘেরাটোপ মতো করে নেন।

সিডকো রোড বসতির কাজল চভন জানালেন, “আমরা রাস্তায় থাকি। পথচারীরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। তাই স্নান করার জন্য এই ছোট্ট একটা ঘেরাটোপ বানিয়েছি। আমার ছোটো মেয়ে আছে, সাবধানে থাকতে হয়।”

Left: The board at the public toilet with rate card for toilet use.
PHOTO • Prakash Ransingh
Right: Clothes create a private space for women to bathe
PHOTO • Prakash Ransingh

বাঁদিকে: গণ শৌচাগারের বোর্ডে লাগানো রেট কার্ড। ডানদিকে: নিজেদের কাপড় দিয়েই স্নানের জন্য নিভৃতি তৈরি করে নেন মেয়েরা

গোকুল নগরের বাসিন্দা নয়না কালে রোজ অনেক ভোরে উঠে দ্রুত স্নান করে নেন, কারণ তাঁর ভয় থাকে কেউ না কেউ তাঁকে দেখে ফেলবে। ডেগুলুর নাকার বছর চল্লিশের ইরফানা শেখ আবার জানালেন, “জলের ব্যবস্থা নেই, যথাযথ আড়ালও নেই। তাই আমি হপ্তায় মাত্র দুইবার স্নান করি।”

“সরকারি জায়গাগুলোয় স্নান করতে হলে প্রতিবার ২০ টাকা করে দিতে হয়। আমরা দিন-আনি-দিন খাই। আমাদের অত খরচে চলবে কী করে?” বলছেন গঙ্গুবাই। “হাতে টাকা না থাকলে সে দিনটা স্নান করি না।” রেল স্টেশনের পাশে থাকা খাতুন পটেল বললেন, “হাতে টাকা না থাকলে নদীতে যাই স্নান করতে। ওখানে প্রচুর পুরুষ ঘোরাফেরা করে, কাজেই আমাদের পক্ষে খুব সমস্যাজনক।”

গোকুল নগরের চেম্বারে জল এলে সব বাচ্চাগুলো স্নান করার জন্য সেখানে ভিড় জমায়। কিশোরী বয়সের মেয়েরা ফুটপাথে স্নান করে, পুরো জামাকাপড় পরেই। মহিলারা গায়ে জল ঢালার আগে শাড়ি জড়িয়ে নেন। ছেঁড়াখোঁড়া কোনও ঘেরাটোপে ভয়ে ভয়ে স্নান করার চেয়ে হয়তো কাপড় পরে স্নান করাই শ্রেয়।

ঋতুস্রাবের সময়ে মেয়েদের এই সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। “ঋতু চলাকালীন কিছু একটা ওজর দেখিয়ে শৌচাগারে ঢুকে প্যাড বদলে নিই। সাত দিনের দিন স্নান করতেই হয়। সেদিন সেই ২০ টাকা দিয়ে শৌচাগারে ঢুকে স্নান করতে বাধ্য হই।”

“দাদারা (অন্য রাজ্যের লোকেরা) আমাদের উপর চিৎকার করে, ‘তোমাদের লোকেদের বল এখানে যেন শৌচ না করে।’ আমাদের কমোড ব্যবহারের অভ্যাস নেই, তাই মাঝে মাঝে কেউ কেউ নোংরা করে ফেলে। সেইজন্যই ওরা আমাদের এখানে শৌচ করতে দেয় না,” জানালেন গঙ্গুবাই।

Left: Requesting water from security guards of buildings doesn't always end well.
PHOTO • Prakash Ransingh

বাঁদিকে: পাহারাদারদের থেকে জল চাওয়ার ফল সবসময় ভালো হয় না। ডানদিকে: একটি ব্যক্তিগত মালিকানার ফিল্টার থেকে জল ভরছেন এক অভিবাসী

সরকারি শৌচাগার ব্যবহার করতে প্রতিবার ১০ টাকা খরচ হয়, আর বড়ো পরিবারের সব সদস্যদের জন্য সেটা ক্ষমতায় কুলোয় না। তার চেয়ে খোলা জায়গায় করাটা কম খরচের। “রাত ১০টার পর সরকারি শৌচাগার বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আমরা খোলা জায়গায় করি। আর কী করব?” জানাচ্ছেন ৫০ বছর বয়সি রমেশ পাটোডে, পুরসভা মাঠের বসতির এক বাসিন্দা।

“আমরা প্রকাশ্যেই শৌচ করি। রাতে যেতে হলে ভয় লাগে, তাই দু-তিনজন মেয়ে মিলে যাই,” জানালেন নয়না কালে, গোকুলনগরের পুরসভা মাঠের পাশের ফুটপাথের বাসিন্দা। “বাইরে শৌচ করতে গেলে ছেলেরা টিটকিরি দেয়, হেনস্থা করে। কেউ কেউ পিছুও নেয়। পুলিশকে কয়েকশো বার বলেছি।”

এর বিকল্প, “রাস্তার কোণেয় বসে যাওয়া”, জানাচ্ছেন সিডকো রোড এলাকার কাজল চহ্বান।

২০১১-১২ সালে নানদেদে টোটাল স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে একটি নাগরিক নিকাশি পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল। সে সময়ে শহরের বাসিন্দাদের প্রায় ২০ শতাংশ প্রকাশ্যে শৌচ করতেন। ২০১৪-১৫ সালে নান্দেদ শহরে মোট ২৩টি সরকারি শৌচাগার ছিল স্রেফ ২১৪ আসনের, প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৪১০০ আসন কম, জানাচ্ছে একটি রিপোর্ট । তৎকালীন পৌর কমিশনার নিপুণ বিনায়ক নিকাশি ব্যবস্থা, বর্জ্য এবং বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি যোগদানমূলক যোজনা চালু করেন গোষ্ঠীভিত্তিক টোটাল স্যানিটেশন প্রকল্পটির অধীনে। ২০২১ সালে ওয়াঘালা পুরসভা ওডিএফ+ এবং ওডিএফ++ (Open Defecation Free বা প্রকাশ্য শৌচমুক্ত) শংসাপত্র পায়।

কিন্তু শহরের প্রান্তিক পরিযায়ী জনসংখ্যার কাছে পানীয় জল এবং পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ নিকাশি ব্যবস্থা এখনও দূর অস্ত। যেমনটা জাভেদ খান বলছেন, “পরিষ্কার, বহনযোগ্য জল পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই এখানে।”

সীমা কুলকার্নি, পল্লবী হর্ষে, অনিতা গোডবোলে এবং পুনের এসওপিপিইসিওম-এর ড. বোসের প্রতি কৃতজ্ঞ এই প্রতিবেদক। ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট সটাডিজ-এর সঙ্গে তাঁদের যৌথ গবেষণাটি 'Towards Brown Gold Re-imagining off-grid sanitation in rapidly urbanising areas in Asia and Africa’ শীর্ষক সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Prakash Ransingh

Prakash Ransingh is a research associate at the Society for Promoting Participative Ecosystem Management (SOPPECOM), Pune.

Other stories by Prakash Ransingh
Editor : Medha Kale

Medha Kale is based in Pune and has worked in the field of women and health. She is the Marathi Translations Editor at the People’s Archive of Rural India.

Other stories by Medha Kale
Editor : Priti David

Priti David is the Executive Editor of PARI. She writes on forests, Adivasis and livelihoods. Priti also leads the Education section of PARI and works with schools and colleges to bring rural issues into the classroom and curriculum.

Other stories by Priti David
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

Other stories by Dyuti Mukherjee